আলবার্টা, ২১ শে ফেব্রুয়ারী-বহুবিচিত্র সংস্কৃতির মাঝে প্রবাসে বাংলার ভাষার চর্চা, এর ব্যবহার এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার অঙ্গীকার নিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে পালন করেছে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব আলবার্টা । একুশের মধ্যাহ্নে অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রথম প্রহরে কটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ও পেশাজীবী সংগঠন এডমোনটনের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাকুইনে স্থাপিত শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সেন্টার অব আলবার্টা (বিপিসিএ), মাহিনুর জাহিদ মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশান, পেশাজীবিবৃন্দ, কিশোর-কিশোরী এবং অতিথিবৃন্দ, ফুলেল শ্রদ্ধার্ঘ্য জানায় বায়ান্নের মহান ভাষা শহীদের। বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সেন্টার অব আলবার্টার সভাপতি বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ, শিক্ষাবিদ ড. নূরুল ইসলাম, ড. মুসফিক এবং বেসার কায্যকরী পরিষদের সদস্য টমাল ইসলাম. আহসান উল্লাহ রনি, ডলি ইসলাম, মাসুদ ভুইয়া, আনামুর রহমান এবং পরবর্তীতে তাদের সাথে যোগ দেন রাজশাহীর অন্যতম ভাষা সৈনিক মোঃ সিদ্দিক হুসাইন, অতিথি মেজবাউল ইসলাম, ড. হাফিজ উর রহমান, ও ড. মুসফিক প্রমুখ।
ফুলেল শ্রদ্ধা জানান মাহিনুর জাহিদ মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা লুৎফুন্নেছা জাহিদ, নাছিমা মির্জা, রূপা চৌধুরী, সোহা ইসলাম ও রিয়া কারিন এবং সাইফুর হাসান শুরুতে বেসার সাবেক সভাপতি তাজুল আলী ও সাবেক কার্য্যনির্বাহী মুহাম্মদ জাকারিয়া ও শুভেচ্ছা জানাতে আসেন।
ভাষা সৈনিক মোঃ সিদ্দিক হুসাইন বায়ান্নের মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করেন। প্রেসক্লাব সভাপতি বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ নিজ নিজ ভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং পরিবারে মাতৃভাষার চর্চার উপর গুরুত্বারূপ করেন। নতুন প্রজন্মের শিশু কিশোদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বেসার পেইন্টিং প্রতিযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এ বছর ২১শে ফেব্রোয়ারী বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সেন্টার অব আলবার্টা (বিপিসিএ) কর্তৃক সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান, সাংগঠনিক প্রচেষ্টা ও শ্রেষ্ঠ স্পোর্টস সংগঠনে কৃতিত্বের দাবিদার দুইজনকে তাদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে মাহিনুর জাহিদ মেমোরিয়েল একুশে এওয়ার্ড এর ঘোষনা প্রদান করেন। তারা হলেন ডাঃ শেখ জলিল (সাহিত্য ও সাংবাদিকতা) ও আহসান উল্লাহ (কমিউনিটি -স্পোর্টস সংগঠক) তাদের কে অনুষ্ঠানে পরিচিত করে দেন। পরিচিত করে দেন এডমনটনস্থ বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টার (বেসা) গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক প্রচেষ্টা ও স্বেচ্ছাশ্রমের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ একুশে হেরিটেজ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের, যারা হলেনঃ কাউসার খন্দকার (ম্যাকইউন বিশ্ববিদ্যালয়), নূরে আলম (কমিউনিটি বিজনেস-বাংলা বাজার), মোহাম্মদ. জাকারিয়া ( সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা) এবং ড. মুসফিক (স্বেচ্ছাসেবী)।
বিগত বছরব্যাপি বাংলাদেশ প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ হেরিটেজ অ্যান্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা এর সহযোগিতা নিয়ে কানাডার সকল প্রাদেশিক সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট দিনটির সরকারী স্বীকৃতির জন্য আবেদন জানায়। একটি তথ্যবহুল ওয়েব হাব গড়ে তুলে।
কানাডার গভর্নর জেনারেল মহামান্য রাইট মাননীয় ডেভিড জনস্টন বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে একটি তাৎপর্য্যপূর্ণ বার্তা পাঠিয়েছেন, বার্তা পাঠিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী মাননীয় ষ্টিফেন হারপার, মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতা থমাস মুলকির, আলবার্টা প্রাদেশিক পর্যায়ে লেঃ গভর্নর মাননীয় ডোনাল্ড এস এথেল, মাননীয়স্পীকার জেনে ঝুজডেস্কি, প্রিমিয়ার মাননীয় জিম প্রেন্টিস, আলবার্টা প্রদেশের কালচারাল এন্ড ট্যুরিজম মিনিষ্টার মাওরেন কুবিনিক ও ম্যানিটোবা প্রদেশের বহুসংস্কৃতিবাদ ও স্বাক্ষরতা বিষয়ক মন্ত্রী ফ্লোর মারসিলিনো এবং এমএলএ সোহেল কাদরী। বাংলাদেশ প্রেসক্লাব একটি তথ্যবহুল ও মনোরম ম্যাগাজিন প্রকাশ করে যা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপর সম্প্রতি একটি ওয়েবসাইটে ও প্রকাশিত হয়েছে- (http://motherlanguageday.ca/) যা প্রবাসে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের তথ্যসূত্র হিসেবে কাজ করছে।
সম্প্রতি এক আনুষ্ঠানিকতায়কানাডার ইতিহাস মিউজিয়ামে একুশে ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সম্ভার দাখিল করা হয়েছে ইমিগ্রেশন ইতিহাস মিউজিয়াম পিয়ার ২১ এর ইতিহাসবিদ এমিলি বার্টনের কাছে । কানাডা সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সরকারী ছুটি ও তা প্রতিটি প্রদেশে যথাযথভাবে পালনের জন্য ঘোষনা দেয়ার আবেদনের ফলাফল আসতে শুরু করেছে; আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কানাডায় স্বীকৃতি দিতে বেসরকারি সদস্যের বিল সি-৫৭৩ এতে রাজ সম্মতির যখন অপেক্ষায় রয়েছে তখন সম্প্রতি বৃটিশ কলম্বিয়া ও ম্যানিটোভা দিবসটিকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রোক্লেমেশন জারি করেছে। বাংলাদেশ প্রেসক্লাব (বিপিসিএ) এর সভাপতিকে আরো কয়েকটি প্রদেশ তাদের প্রোক্লেমেশন বা স্বীকৃতি কাজের অগ্রগতি জানিয়েছেন।
ফিরে দেখা একটি বছরের আবেগ অনুভুতি আর সফলতার আনন্দ নিয়ে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ প্রাঙ্গনে সমবেত হন নারী, পুরুষ শিশু কিশোর ও যুবকেরা, পরম শ্রদ্ধায় শপথ নেন মাতৃভাষা ও স্বাধীনতাকে সমুন্নত করার।
সংযুক্ত: একুশের অনুষ্ঠানমালার কয়েকটি ছবি, ইতিহাস মিউজিয়ামের ছবি, প্রোক্লেমেশনের কপি.