দৈনিক ইত্তেফাকে (২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ইং ) আইন-শৃঙ্খলার টেকসই উন্নয়ন শীর্ষক ড. এম এ সোবহান, যিনি বাংলাদেশ পুলিশ এর স্পেশাল সিকিউরিটি এন্ড প্রটেকশন (ব্যাটালিয়ন-১) এর একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার- তার সুচিন্তিত একটি লেখা পড়লাম. বিদগ্ধজনচিত এ লেখাটি পড়ে এ বিষয়ে প্রবাস থেকে মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে তা তুলে ধরতেই এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। আইন-শৃঙ্খলার টেকসই উন্নয়ন এর অর্থ আমাদের অবশ্যই বোধগম্য আইন শৃঙ্খলার অবনতি প্রবাস থেকে আমাদের প্রায় সবাই বেশ ব্যথাতুর করে।সত্যিকথা, আমরা টিভিসংবাদগুলোকে কখনো কখনো এড়িয়ে যেতে চাই। কারন দেশে সংঘটিত অপরাধের ধরন এবং এগুলোকে সামাল দেয়ার প্রক্রিয়ায় ও প্রতিক্রিয়ায় পেশাদারীত্বের তীব্র অভাব পরিলক্ষিত হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব যথাযথই বর্নিত অপরাধগুলোকে ভালভাবে চিহ্নিত করেছেন-" সাইবার অপরাধ, অর্থসংশ্লিষ্ট অপরাধ, সংঘবদ্ধ অপরাধ, মানব পাচার, কালোবাজারী, মাদক, নারী ও শিশু সংক্রান্ত অপরাধ, ইভটিজিং, সীমান্তের অপরাধ, জঙ্গিবাদ, উগ্রতা, হত্যা, ধর্ষণ, সম্পত্তি বিষয়ক অপরাধ ও হোয়াইট কলার অপরাধ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ পুলিশ বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে সত্য কিন্তু সে ক্ষেত্রে রয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা। লজিস্টিকস্ সমস্যা, তদন্ত কর্মকর্তার নিরাপত্তাহীনতা, পুলিশ কাস্টডিতে নির্যাতন, বিভিন্ন প্রকারের হত্যাকাণ্ড, জনসম্পৃক্ততার অভাব, সাক্ষীর অভাব, ভিকটিমের নিরাপত্তাহীনতা, শক্তি প্রয়োগ করে সাক্ষ্য আদায় প্রভৃতি সমস্যা এশিয়ার দেশগুলোতে বিরাজমান"...ইত্যাদি
নারী ও শিশু সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে প্রবাসীদের শংকা অনেক বেশী কারন মামলা দাখিলের প্রক্রিয়া থেকে শুরু কর মামলা নিস্পত্তি পর্যন্ত ব্যাপক জটিলতা, ঘুষ, দৃর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার নজির রয়েছে।
এমনকি কিছুকিছু ক্ষেত্রে পুলিশ এর পেশাদারীত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয় গুটি কয়েক সদস্যের জন্য!একটি উন্নত দেশের অর্থাৎ কানাডীয়ান পুলিশী ব্যবস্থা এবং আইনের শাসন এর বিষয়ে তুলনা হয়ত হাসির খোরাক যোগাবে। কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ যেমন ব্যবসায়ী, অধ্যাপক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শ্রমজীবি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র সহ নানা পেশার মানুষ তাদের প্রাপ্য মানবাধিকার, সম্মান, চাওয়া-পাওয়া নিয়ে নিতান্ত লড়াই করতে পারেন . কিন্তু অন্যদের কি অবস্থা?
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তার লেখায় তথ্যভিত্তিক অপারেশন কার্যক্রম চালানো ও টার্গেট করে অভিযান পরিচালনা করে অপরাধ ও অপরাধীকে নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে অধিক্ষেত্রকে ভাগ করে প্রতিটি এলাকায় প্রতিনিধি রাখা ও অপরাধীর বিরুদ্ধে গুপ্তচর নিয়োগ এবং অপরাধীকে ক্লোজ মনিটরিং এর আওতায় আনা যেতে পারে। ... তদন্তের ক্ষেত্রে বস্তুগত সাক্ষ্যের উপর জোর দিতে হবে। মোবাইল ট্যাকিং ডাটা, ঘটনার ছবি বা ফটোগ্রাফ, ভিডিও, সাক্ষীর বা ভিকটিমের জবানবন্দি, হস্তরেখা পরীক্ষার মতামত সংগ্রহের উপর জোর দিতে হয়। এছাড়া মোডাস অপারেন্ডী, মোটিভ, বংশগতি প্রভৃতি ট্রেন্ড বা প্রবণতা স্টাডি করেও তদন্তের উন্নতি করা যায়।
এছাড়াও লেখাটির প্রনিধানযোগ্য সুপারিশের মধ্য পুলিশের জনবান্ধব হওয়া। জনগণকে পুলিশের কাজের অংশীদার করা। জনগণকে পুলিশের কাজে সম্পৃক্ত করা। কমিউনিটি পুলিশিং এর মাধ্যমে জনগণকে কাউন্সিলিং করা সহ বেশ কিছু সুপারিশ রয়েছে…।
ড. সোবহানের সাথে ভিন্নমত নেই তবে ৩৫ বছরে মানাধিকার ও আইমচর্চার অভিজ্ঞতার আলোকে প্রবাসের একটি বাস্তব ঘটনা তুলে ধরতে চাই। তুলে ধরতে চাই পুলিশের নিজদের আইন মান্যতার দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের কিছু আচরণের বিষয়ে।
মিডিয়া কর্মী সাইফুর হাসান (প্রকাশক, এশিয়ান নিউজ এন্ড ভিউজ) একজন কানাডা প্রবাসী নিজের দাম্পত্য সমস্যা নিয়ে নিরন্তর চেষ্টার পর ও বাংলাদেশের চাঁদপুর সদর থানায় একটা কানাডিয়ান কোর্ট আদেশের বিষয়ে একটি এফ আই আর দাখিল বা জিডি এন্ট্রি করাতে পারেননি। অপরাধ ও অপরাধীদের প্রতি জিরো টলারেন্সের পরিবর্তে হিরো সন্মান দেখানোর প্রবনতা,মিথ্যা,অসততা এবং জালিয়াতির প্রতি রহস্যজনক পৃষ্টপোষকতা আইনের শাসনকে শুধুই বিলম্বিত ও প্রশ্নবিদ্ধই বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
কানাডীয়ান কোর্টের আদেশ উপেক্ষা: শিশু রোওজের মানবেতর জীবন ও উদ্ধারে বিড়ম্বনা শীর্ষক একটি প্রতিবেদন হলিউড বাংলা নিউজ সহ (অক্টোবর ১৬, ২০১৬) কয়েকটি ম্যাগাজিনে সংবাদ আকারে প্রকাশিত হয়েছিলো তারপর ও প্রশাসন এতটুকু নড়াচড়া করেনি।
কানাডার কোর্ট অব কুইন বেঞ্চ অব আলবার্টায় “COURT OF QUEEN BENCH OF ALBERTA” তে সন্তানের অধিকার বঞ্চিত বাবা হিসেবে সাইফুর একটি মামলা দায়ের করেন। কানাডিয় শিশু সাবিরা হাসান (রোওজ)বাংলাদেশের চাঁদপুর সদর থানাধীন তারপুরচন্ডি গ্রামে এখনো আটক রয়েছে। তাকে উদ্ধারের জন্য এ মামলার নিজ প্রেক্ষাপট। এ বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় একটি কানাডিয় বিশেষ আদালতে এর শুনানী অনুষ্ঠিত হয়।
শুনানী শেষে ম্যাডাম জাষ্টিস ডি পেন্টিলিচুক ১৯শে ফেব্রুয়ারী ২০১৬ যুগান্তকারী একটি আদেশ প্রদান করেন। বাদি পক্ষে এ মামলাটি পরিচালনা করেন দেড়েক এ স্টোন, ব্যারিষ্টার এন্ড সলিসিটর। ম্যাডাম জাষ্টিস তার রায়ে নাসরিন আক্তার ঝুমুরকে কন্যা সাবিরা হাসানকে নিয়ে কানাডায় ফিরে আসার জন্য সময় দিয়ে একটি নির্দেশ দেন। এ সময়ের পর সাইফুর হাসান ঝুমুরের সম্মতি ব্যতিরেকেই কানাডায় ফিরিয়ে আনতে পারবে। সাইফুর সাবিরাকে ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তিকালীন পূর্ণ কাষ্টুডি পাবেন এবং কানাডায় শিশুর উপর ঝুমুরের মানবিক এক্সেস থাকবে। এ ছাড়া বিবাদির উপর কোর্ট ১ হাজার ডলার খরচ ধার্হ্য করেন এবং সাইফুরকে তা পরিশোধের আদেশ দেন।
কানাডার বিজ্ঞ আদালত Parens patriae ডক্ট্রেইন আমলে নিয়ে এ মামলার রায় প্রদান করেন ( "জন্মভূমি- অভিভাবক") "পিতা বা মাতা" লাতিন ভাষায়. আইন, এটা রাষ্ট্র ও জননীতির ক্ষমতায় অবমাননাকর বা অবহেলাকারী পিতা বা মাতা, আইনগত অভিভাবক, বা অনানুষ্ঠানিক তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ, এবং যদি কোনো শিশু বা ব্যক্তির সুরক্ষার প্রয়োজন হয় তবেই আদালত অভিভাবক হিসেবে কাজ করার জন্য এধরনের নির্দেশ প্রদান করে থাকেন.
উল্লেখ্য, মামলার বাদী সাইফুর ও তার পরিবার কানাডীয় বিচার প্রক্রিয়া ও সংস্কৃতির অনুসরণে প্রথমেই পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেন। বাদীর দাদু সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান রিক্রটিং অফিসার কর্নেল (অবঃ) এম আলাউদ্দিন ২০১৩ সালে তদানিন্তন চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপারের সাথে এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন।পুলিশ সুপার চাঁদপুর সদর এএসপিকে বিষয়টি দেখার ও আশু সমাধানের নির্দেশ দেন।এএসপি (সদর) ঝুমুর ও তার অভিবাবকদের কার্য্যালয়ে ডেকে পাঠান। বাদি পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা মু. হোসেন এবং কুমিল্লা জজকোর্টের এডভোকেট ম. সেলিম সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এএসপি সৈকত প্রবাসে যেতে ঝুমুরের কোন সমস্যা আছেে কিনা জানতে চান ও কোন বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে কিনা তাও জানতে চান। তখন ঝুমুর স্পষ্টভাবে স্বামী বা তার পরিবারের বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ নেই বলে জানান এবং সাবিরাকে নিয়ে কানাডায় ফিরে আসার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এসপি মহোদয়ের পরমর্শে ও কানাডিয়ান হাইকমিশনের জ্ঞাতে ঝুমুর ও শিশু সাবিরার জন্য কানাডা থেকে বিমানের ফেরত টিকেট কেটে পঠোনো হয় এবং খরচপত্রও প্রদান করা হয়। ঝুমুরের মা খুরশিদা বেগম ও বাবা তাকে বিমানে তুলে দিয়েছেন বলে সাইফুরকে জানানো হয়. অথচ ঝুমুর ও তার পরিবার সে সময় চাদপুরের বাড়িতেই অবস্থান করছিলো। ৭ই জুলাই TURKISH AIRLINES (T5KMYC) টিকেট নং # ২৩৫৫২৬০৪৬৪৫১৭ ও ২৩৫৫২৬০৪৬৪৫১৮(মূল্য#১লক্ষ৭১হাজার ৪৫২.৬১) এর মাধ্যমে ঝুমুর ও শিশু সাবিরার ফিরে আসার কথা। ওই সময় মানিগ্রামের মাধ্যমে শ্বশুর নূরুল ইসলামকে খরচের টাকা ও পাঠানো হয় (সুত্র নং#৭৬৬০৯৮২৪). অতীতে ও তাদের ২টি টিকেট তামাদি হয় এবং সাইফুরকে এর অর্থদন্ড দিতে হয়।চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ৮ জুলাই ২০১৪ বাংলাদেশের পুলিশ সদর দপ্তরে মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
কানাডিয়ান শিশু সাবিরা হাসানকে নিয়ে, প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের মতো দণ্ডনীয় অপরাধে জড়িত হবার পর সাইফুর কন্যা সাবিরাকে ফিরে পেতে একের পর এক উদ্যোগ নেন।
২৩শে মে ২০০৮ সালে রেজিস্ট্রি কাবিন মূলে নাসরীনের সাথে সাইফুরের বিয়ে হয়।এডমন্টনে বসবাসকালে নাসরিন তার নিজের সংসার গোছাতে ব্যস্ত ছিলো। সাইফুরের পরিবারের অন্যান্যরা পৃথক পৃথক বাসায় বসবাস ও বাবা ভিন্ন একটি ছোট সিটিতে বসবাস করতেন। সাইফুর দাম্পত্য অধিকার ফিরে পেতে ঢাকার বিজ্ঞ ১২ নং পারিবারিক আদালতে আরো একটি মামলা দায়ের করেন(৪৬৬/২০১৫)। ঝুমুর উকিলের মাধ্যমে জানান তিনি সাইফুরকে বিগত ২৫/০২/২০১৪ তারিখেই তালাক দিয়েছেন। অথচ ২রা জুলাই ২০১৪ সাইফুর হতে অর্থকরি ও কানাডায় ফিরে আসায় বিমানের টিকেট দেন। এছাড়াও বিজ্ঞ আদালতের আদেশ অমান্য করে আদালতে উপস্থিত হওয়া থেকে এ পর্যন্ত বিরত রয়েছেন। বিবাদিনি মামলার তারিখগুলোতে উপস্থিত না থেকে সময়ক্ষেপনের মাধ্যমে একের পর এক ভুয়া কাগজ পত্র তৈরী করছেন এবং পরস্পর বিরোধী তথ্য দিচ্ছেন। বিবাদিনীর দেয়া তথ্যগুলো এতোই স্ববিরোধী যে এর বিশ্লষনের জন্য কোন বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন নেই।
এ করুন অবস্থা থেকে সাবিরা ওরফে রোওজকে নিরাপদ হেফাজতে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সভাপতি চাদপুর সদর থানার ওসি আবদুর রব এবং বর্তমান ওসি ওয়ালী উল্লাহ এর সাথে দীর্ঘ আলোচনা করেন। সাবেক ওসি সাহেব জরুরী ভিত্তিতে কানাডা কোর্টের রায়টি হাতে পেতে চান। কানাডিয়ান হাইকমিশন কে জানিয়ে তা চাদপুর সদর পুলিশকে পাঠানো হয়েছে। যা তারা যথারীতি হাতে পেয়েছেন।নাসরিন নিজে জানান তিনি কোন তালাক নামায় স্বাক্ষর করেননি ।রহস্যময় কারনে পারিবারিক আদালতের মামলা (৪৬৬/২০১৫)খারিজ করেন সহকারী জজ ইসরাত জাহান। এ বিষয়ে জজকোর্ট একটি আপীল গ্রহন করেছে সেই মামলায় ও নাসরীন উপস্থিত হচ্ছে না।
প্রবাসীদের সেবাদানের কার্য্যক্রমের অধীন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সচিব অভিযোগটি নিবন্ধন করেছেন (যার নং-COM/MOFA-BD-7799/2017 তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭. দীর্ঘমেয়াদী আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নে প্রবাসীদের সমস্যাগুলোকে ও গুরুত্ব দেয়া উচিত।