বাংলাদেশের রাজনীতিতে রাজনৈতিক চাহিদা ও আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর ভার্চুয়াল আলোচনায় আজ রাতে অংশ নেওয়া বক্তা দেলোয়ার জাহিদকে ফেসবুক লাইভে পরিচয় করিয়ে দেন অনুষ্ঠানের স্বনামধন্য সাংবাদিক ও সঞ্চালক শাহীন আহমেদ।
সঞ্চালক বক্তার একটি চিত্তাকর্ষক পরিচয় তুলে ধরেন । দেলোয়ার জাহিদ একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, গবেষক এবং কানাডায় বসবাসকারী সাংবাদিক হিসেবে, তিনি স্টেপ টু হিউম্যানিটি অ্যাসোসিয়েশনের স্পেশাল প্রজেক্ট কমিটির চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশ উত্তর আমেরিকান জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি সহ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। দেলোয়ার জাহিদ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কানাডা ইউনিট কমান্ডের একজন নির্বাহী সদস্য, তিনি বাংলাদেশের ইতিহাস ও স্বাধীনতার সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে তার গভীর সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরেছেন। তদুপরি, তিনি ৮০ এর দশকে বাংলাদেশের তৃণমূল মানবাধিকার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। একাডেমিকভাবে সম্পন্ন, তিনি জার্মানির ইউনিভার্সিটি অফ এডুকেশন এবং স্পেনের ইউনিভার্সিটি অফ ভিগোতে গবেষণার অধিভুক্ত সহ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একজন অধ্যাপক। উপরন্তু, তিনি কানাডার ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট পলস কলেজে গবেষণা অনুষদের সদস্য হিসেবে ও তার দক্ষতার অবদান রেখেছেন। দেলোয়ার জাহিদের বহুমুখী পটভূমি এবং মানবাধিকার ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রতি নিবেদন তাকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ সম্পর্কে আলোচনায় একজন উচ্চ যোগ্য এবং অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ অংশগ্রহণকারী হিসেবে তুলে ধরেন ।
______________________________
ক্যালগারি, আলবার্টা ২রা অক্টোবর: কানাডার আলবার্টা থেকে একটি ভার্চুয়াল আলোচনায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর চাপের উদ্বেগের উপর জোর দিয়েছেন, দেলোয়ার জাহিদ, একজন বিশিষ্ট লেখক, গবেষক এবং কানাডায় অবস্থিত সাংবাদিক, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেন এ আলোচক । বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্লগার শাহীন আহমেদ আয়োজিত এই আলোচনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভূখণ্ডকে আঁকড়ে ধরেছে এমন বেশ কয়েকটি সমালোচনামূলক বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন, যা শুধুমাত্র দেশের মধ্যে নয়, পশ্চিমা দেশগুলি বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
টেনশন এবং অনিশ্চয়তা
দেলোয়ার জাহিদের আলোচনার শুরুতে বাংলাদেশে বর্তমানে বিরাজমান স্পষ্ট উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা গুলো তুলে ধরেন । এই উদ্বেগের অগ্রভাগে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, যা দেশে এবং বিদেশে বিতর্ক এবং আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা দেশগুলিতে।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ
জাহিদ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরেন, যার লক্ষ্য সাংবিধানিক সময়সীমা মেনে চলা এবং জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করা। পার্টির মুখোমুখি হওয়া ভয়ঙ্কর বাধাগুলির মধ্যে রয়েছে দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি , মুদ্রাস্ফীতি, একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকট, এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস। আন্তর্জাতিক চাপ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সরকারের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তদুপরি, বিশিষ্ট বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা রাজনৈতিক পটভূমিকে আরও জটিল করে তুলেছে, যা আওয়ামী লীগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে আসছে ।
স্বাস্থ্যসেবা সংকট
আলোচনায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের সংকট তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। স্থানীয় সরকার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অনুভূত অকার্যকর সম্পর্কে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, এই চাপযুক্ত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি পরিচালনা করার সরকারের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ উত্থাপন করেছে সাধারণ মানুষ ।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং চিকিৎসার অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি
আলোচিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে একটি ছিল আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর মধ্যে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা, যা বাংলাদেশে একটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি দিতে সরকারের অস্বীকৃতি পরিস্থিতি আরও ঘনিষ্ঠ করেছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরী হচ্ছে ।
সংলাপ ও জাতীয় ঐকমত্যের ওপর জোর দেওয়া
দেলোয়ার জাহিদ রাজনৈতিক অচলাবস্থা ভাঙার কার্যকর বিকল্প হিসেবে সংলাপের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলির প্রত্যাশা অনুযায়ী পরিচালিত হয় তা নিশ্চিত করতে জাতীয় ঐক্যমত ও সহযোগিতার জরুরি প্রয়োজনিয়তার ওপর জোর দেন।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি মার্কিন অঙ্গীকার
আলোচনায় বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজন মনে করলে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে।
উৎপাদনশীল রাজনৈতিক সংলাপ এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
জাহিদ বাংলাদেশে ফলপ্রসূ রাজনৈতিক সংলাপের তাৎপর্যকে চিহ্নিত করেছেন, বিশেষ করে এমন এক যুগে যেখানে বৈশ্বিক মেরুকরণ এবং চলমান বিতর্ক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন, আশা প্রকাশ করে যে, পশ্চিমা দেশগুলো বা রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সম্ভাব্য ভাবে বিএনপির অংশগ্রহণ সংকট সমাধানে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। নির্বাচনের ফলাফল নির্বিশেষে, আলোচক প্রস্তাব করেন যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি গণতন্ত্রের দিকে দেশটির অব্যাহত অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
একটি শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি স্থাপন করা
দেলোয়ার জাহিদ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য একটি শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতার পর থেকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও, শাসন সংক্রান্ত সমস্যা, দুর্নীতি, রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং বাহ্যিক প্রভাব এর মতো চ্যালেঞ্জগুলি উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে চলেছে। জাহিদ যুক্তি দিয়েছিলেন, আইনের শাসন, মানবাধিকার সুরক্ষা, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ এবং ঐকমত্য নির্মাণ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান অপরিহার্য।
একটি সমৃদ্ধ গণতন্ত্রের জন্য যৌথ দায়িত্ব
জাহিদ উপসংহারে এসেছিলেন যে বাংলাদেশের অব্যাহত গণতান্ত্রিক অগ্রগতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক সংহতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে । তিনি বহিরাগত চাপ সহ্য করতে এবং জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে সেবা করতে সক্ষম একটি স্থিতিস্থাপক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে নাগরিক, সুশীল সমাজের সংগঠন এবং রাজনৈতিক নেতাদের সম্মিলিত দায়িত্ব এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
